Tuesday, December 19, 2017

মক্কা শরীফের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আবার তুর্কিদের কাছে দেয়া হোকঃ সালমান হোসাইন নদভী


মক্কা শরীফের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আবার তুর্কিদের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন সাইয়্যিদ মুহম্মদ সালমান হোসাইন নদভী। ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে তিনি বলেন, আজকে মুসলিম বিশ্বের যে অবস্থা তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। উনিশ শতকে যেসব বিপর্যয় মুসলমানদের ওপর পতিত হয়েছে তাদের শাসকদের কারণে তা দিন দিন বাড়ছে এবং ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে।

বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা সৌদি আরবের। তাদের রাজনীতি দ্বিমুখী এবং তারা হারামাইন শরীফাইনকে বাহনবানিয়ে রেখেছে। সমস্ত মুসলমানকে এই কথা বলে দেয়া উচিৎ যে, জাজিরাতুল আরব হচ্ছে ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাতের হারাম শরীফ।

নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার ওফাৎ এর আগে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এই ওসিয়ত করে গেছেন, জাজিরাতুল আরব থেকে মুশরিক ও ইহুদিদের বের করে দিও। তাই হজরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই মূল্যবান ওসিয়তের ওপর আমল করতে গিয়ে জাজিরাতুল আরবকে পবিত্র করেছিলেন। পরে তেরশ বছরের শাসনকালে কারও এই হিম্মত হয়নি যে, জাজিরাতুল আরবে তাদের পুনর্বাসন করবে।

গোটা ইতিহাসে প্রথমবার যে শাসন গোপনে জাজিরাতুল আরবকে ব্রিটেন ও আমেরিকার কাছে সমর্পণ করেছিল, তাদের সঙ্গে গোপনে চুক্তি করেছিল; তাদের সামরিক বাহিনীকে এখানে ঠাঁই করে দিয়েছিল, যারা জাজিরাতুল আরবের সম্পদের বড় অংশটি ভোগ করছে, সেই শাসক ছিল আলে সৌদের।

আলে সৌদ মুসলিম মিল্লাতের এই হারাম শরীফ ও মুসলিম উম্মাহর ভাণ্ডারকে অবৈধভাবে আমির ও শাহজাদাদের ভোগ-বিলাসের জন্য ব্যবহার করেছে। যা আমাদের চেয়ে বেশি জানে আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সরকার এবং সেসব দেশের জনগণ।

যেকোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান বা প্রধান নির্বাহীর একটি বেতনভাতা থাকে। তিনি চাইলেই রাষ্ট্রীয় সম্পদ নিজের ইচ্ছামতো ভোগ করতে পারেন না। আর ইসলামে তো এর অনুমতি কোনোভাবেই দেয়নি।

ইসলাম এই শিক্ষা দিয়েছেন, হজরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদে খুৎবা দিচ্ছিলেন আর একজন সাধারণ মুসল্লি দাঁড়িয়ে উনাকে পোশাকের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিলেন। ইসলামের এসব দৃষ্টান্ত সজীব রাখা জরুরি।

আজকে সৌদি আরবের কার্যকরী শাসক মুহাম্মদ বিন সালমান এবং তার বাবা শাহ সালমান সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। তাদের সম্পদের দাস্তান আলিফ লায়লা এবং জাহেলি যুগের ইরান ও রোম শাসকদেরও ছাড়িয়ে গেছে। তাদের এই ভোগবিলাস এবং স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের ব্যাপারে গোটা মুসলিম বিশ্ব তাদের প্রশ্ন করার অধিকার রাখে।

দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের সফর বিশেষ করে মরক্কো ও রাশিয়ার সাম্প্রতিক সফরে তাদের অপব্যয়ের চিত্র প্রখ্যাত সংবাদমাধ্যমগুলোতে ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে।

বর্তমানে জাজিরাতুল আরবকে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানদের কোলে সমর্পণের যে লজ্জাজনক খেলা চলছে তা আর কোনো গোপন বিষয় নয়। দুনিয়ার সবচেয়ে অসভ্য ও নির্লজ্জ শাসক ডোনাল্ট ট্রাম্পকে তারা রিয়াদে আমন্ত্রণ জানিয়ে মুসলমানদের অপদস্থ করেছে। মুসলিমদের নিদর্শনকে তার (ট্রাম্প) দ্বারা পদদলন করা হয়েছে।

বর্বর ইসরাইলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী হামাসকে তারা সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইসরাইলে গোপনে সফর করেছে। আল কুদসশহরকে ইসরাইলের রাজধানী করতে ফিলিস্তিনিদের অন্য কোনো দেশ অথবা দ্বীপে পুনর্বাসনের গোপন প্ল্যান করেছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে ডেকে ধমক দিয়েছে।

নিজ দেশের (সৌদি আরব) খ্যাতিমান আলেমদের গ্রেপ্তার করে দুর্নীতির তকমা লাগিয়েছে। লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে লুকোচুরি খেলেছে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে ধনাঢ্যদের সম্পদের অংশ নিয়ে তাদের দায়মুক্তি দিয়েছে।

সবশেষ খ্রিস্টবাদের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের গভীরতা এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, যিশুখ্রিস্টের ছোট্ট একটি পেন্টিং ৪৫০ মিলিয়ন ডলারে কিনতে হয়েছে। এমনিতেই নবীদের ছবি ধারণ করা হারাম। আর হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম. উনার ভুয়া ছবি কেনার জন্য একটি ছোটখাট দেশের মোট বাজেটের সমান অর্থ ব্যয় করেছে সৌদি আরব।

অথচ ইয়েমেন শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের বোমায় ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। তাদের দুর্ভিক্ষে ফেলা হচ্ছে। ৬৫টি দেশের সঙ্গে মিলে তিন বছর ধরে সিরিয়া ও ইরাকের লাখ লাখ মানুষকে ক্ষুধার্ত রেখে মৃত্যু উপত্যকায় ঠেলে দিচ্ছে।

ফিলিস্তিনের ইতিহাস রক্তে রঞ্জিত। কিন্তু ইহুদিদের গোপন বন্ধু (সৌদি আরব) কখনও তাদের সহযোগিতা করেনি। অভিশপ্ত ইহুদিদের সঙ্গে কখনও যুদ্ধ করেনি। বরং তাদের বিরুদ্ধে কুরআনের যে আয়াত আছে তা না পড়াতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে স্কুল-কলেজে।

তাদের মুরব্বিট্রাম্প যখন জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা দিলো তখনও তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই তাদের মুখে। এমনকি এই ঘোষণার দুই তিন দিন পর জুমার খুতবায় ইমামদের এ ব্যাপারে কিছু বলতে পর্যন্ত দেয়নি।

মুসলমানদের জানা উচিৎ, হারামাইন শরীফাইনের  মিম্বর আজ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্য নয়। বরং সৌদি শাসকদের অশুভ রাজনীতির প্রতি সমর্থন যোগানোর জন্য। সৌদি শাসক আত্মমর্যাদা বোধসম্পন্ন আলেমদের মুখে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আর আত্মমর্যাদাহীন শাসকপূজারি আলেমদের বসানো হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদে।

এই অবস্থায় সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য উচিত হলো তাদের মুখোশ বিশ্ববাসীর সামনে ফাঁস করে দেয়া। আর হারামাইন শরিফাইন ও জাজিরাতুল আরবের ব্যবস্থাপনাকে মুসলিম বিশ্বের কাছে সম্মিলিতভাবে সমর্পণের জন্য দাবি জানানো।

তুরস্ক, পাকিস্তান, কাতার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এসব দেশের যৌথ সংস্থার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে।

এই প্রোপাগাণ্ডায় বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ নেই যে, ইরানের শিয়াদের কর্তৃত্ব হারামাইনের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এটা নির্জলা মিথ্যা। তারা তো সিরিয়া, লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেন শিয়াদের কাছে সোপর্দ করে রেখেছে। আগেও করেছে এখনও করছে।

কিছু নির্বোধ তাদের (সৌদি) পক্ষে সুর উঁচু করছে। এর দ্বারা মূলত তারা মুসলমানদের চোখে ধুলো দেয়ার চেষ্টা করছে। এই মুহূর্তে গোটা মুসলিম বিশ্ব তুরস্কের সঙ্গে। তুরস্কের কাছে হারামাইন শরিফাইনের সম্মান সবচেয়ে বেশি। এজন্য বিশ্ব মুসলিমদের পক্ষ থেকে দাবি তোলা উচিৎ, হারামাইনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আবার তুর্কিদের কাছে হস্তান্তর করা হোক।

আর ইহুদি-খ্রিস্টানদের সঙ্গে চুক্তিকারী আলে সৌদকে বরখাস্ত করা হোক। এবার আমাদের দেখা উচিৎ কত মুসলমান এই দাবির পক্ষে একমত। এটি মূলত একটি বৈশ্বিক গণভোট। এর দ্বারাই মুসলিমদের ভাগ্য নির্ধারণ হওয়া চাই।

অনুবাদ: জহির উদ্দিন বাবর

মতামত প্রদানেঃ ভারত উপমহাদেশের প্রখাত আলেম আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আন নদভীর নাতি ও জমিয়ত সাবাব আল ইসলাম হিন্দের প্রেসিডেন্ট আল্লামা সাইয়্যিদ সালমান হোসাইনী আন নদভী।

শেয়ার করুন

0 comments: